বাঁশ দিয়ে ভবন রক্ষার চেষ্টা,এই কলেজে পাঁচটি ভবন আছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ।কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। ভবনের ধস ঠেকাতে শ্রেণিকক্ষ ও বারান্দায় বাঁশের খুঁটি ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। ওই বাঁশ সরে গিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিকল্প না থাকায় জরাজীর্ণ ভবনেই পাঠদানসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ করা হচ্ছে।

বাঁশ দিয়ে ভবন রক্ষার চেষ্টা
সরকারি কলেজ সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজে বর্তমানে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর, স্নাতক (পাস) ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এই কলেজে পাঁচটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে মূল ভবনে অধ্যক্ষের কার্যালয়, উপাধ্যক্ষের কার্যালয়, কলেজের কার্যালয়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দপ্তর ও ৩২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। কলেজের একমাত্র কম্পিউটার ল্যাবটিও এই ভবনে। মূল ভবনটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে পরিচিত।
বাকি চারটি ভবনের মধ্যে দুটি তৃতীয় তলা, একটি চারতলা ও একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি তিনতলা ভবনের একটি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং অন্যটি দর্শন ও ইতিহাস বিভাগের ক্লাস হয়। দর্শন ও ইতিহাস বিভাগের ভবনের তৃতীয় তলায় কলেজের গ্রন্থাগার। চতুর্থ তলার ভবনে গণিত, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান করা হয়। এ ছাড়া পাঁচতলার ভবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা, অর্থনীতি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ক্লাস হয়।
এ ছাড়া এই ভবন পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।‘নাজুক অবস্থার কথা শুনে আমি ওই কলেজ পরিদর্শন করেছি। ভবনটি সংস্কারের জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তাই অতিরিক্ত ধস ও ফাটল ঠেকাতে আমরা বাঁশের খুঁটি দিয়ে রেখেছি।’মো. সুলতান মাহমুদ, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল ভবনের অনেক স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে।

ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, কলেজের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একাদশ শ্রেণির ক্লাস চলছে। ওই কক্ষের ছাদের কিছু স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। সেখানে বাঁশের খুঁটির ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ভবনটিতে বাঁশের খুঁটি দেওয়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, সংস্কারের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ না থাকায় পলেস্তারা ধসে পড়া ঠেকাতে বাঁশের খুঁটি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই ভবনটির মেরামত কাজে হাত দেওয়া হবে।একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হাসান বলে, ‘ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও পলেস্তারা ধসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। কিছুদিন আগে ভবন মেরামতের কাজ শুরু করেছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে কাজ না করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় ভয় নিয়ে ক্লাস করি। ক্লাসে মন বসে না।
কয়েক দিন আগে আমার এক বন্ধুর গায়ে বাঁশের খুঁটি খুলে পড়েছিল। ভবনটি সংস্কার না করলে যেকোনো দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা দাস বলে, ‘ক্লাসরুমের সামনে বাঁশের খুঁটি, ভেতরে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ক্লাস চলাকালে মাথায় পলেস্তারা, সিমেন্ট খুলে পড়ে। আমাদের ক্লাসের পাশের রুমটায় ফাটল বেশি হওয়ায় সেটি তালা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ভবনের একদিক যদি ভেঙে যায় পাশের রুমে কি আমরা বেঁচে থাকব? খুব ভয় ভয় নিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে আসি। ভবনটি মেরামত করা জরুরি।’
কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবনটি কলেজের সবচেয়ে পুরোনো ভবন। পুরোনো ভবন হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে গেছে। একাদশ শ্রেণির দুটি শ্রেণিকক্ষের ছাদের বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে।আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানোর পর তারা প্রায় দুই মাস আগে এসে কাজ শুরু করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় তারা কাজ বন্ধ করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখে গেছে।

কলেজে শিক্ষার্থীর তুলনায় পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই সেখানে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাজুক অবস্থার কথা শুনে আমি ওই কলেজ পরিদর্শন করেছি। ভবনটি সংস্কারের জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তাই অতিরিক্ত ধস ও ফাটল ঠেকাতে আমরা বাঁশের খুঁটি দিয়ে রেখেছি।
আরও পড়ুন:
