Site icon কুড়িগ্রাম জিলাইভ | truth alone triumphs

বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিক কুড়িগ্রামে

বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিক কুড়িগ্রামে,কুড়িগ্রাম জেলায় দিন দিন বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা। বয়সের শেষ প্রান্তে এসে পরিবারের সঙ্গে অবসর কাটানোর যখন সময়, তখন তারা উপায়ান্তর না পেয়ে পেট বাঁচাতে কর্মযুদ্ধে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ হিসেবে সরকারি বেসরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকা, পারিবারিক সম্পর্কের ছন্দপতন, বাল্যবিয়ের পর বিবাহ বিচ্ছেদকে দায়ী করছেন সুশীল সমাজ। এছাড়া জেলায় কয়েক দশক আগেও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি না মানায় অধিক সন্তান নেওয়ার দরুণ পরিবারের কর্তার উপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।

 

 

বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিক কুড়িগ্রামে

কথা হয় উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তনুরাম গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী অটোচালক খোকা মিয়ার সঙ্গে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার এই ব্যক্তি  বলেন, প্রায় ১২০ বছরের বৃদ্ধ মা ফুলজন বেওয়া, স্ত্রী, এক মেয়ে ও নাতী নিয়ে তার সংসার। পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাড় করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অটো চালান। ১৯৭৫ সাল থেকে পায়ে চালিত রিকশা চালাতেন। কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। পরে অচল বাম পা নিয়ে সংসারের বোঝা টানতে বছর তিনেক থেকে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। এই ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করে তা দিয়ে চলে সংসার।

খোকার মতো এমন চিত্র জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের আরাজি পলাশবাড়ি গ্রামের দছিমুদ্দিনের। বয়স পেরিয়েছে আশি বছর। পাকিস্তান আমল থেকে প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনিও রিকশা চালাচ্ছেন। এ দিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পেট চলছে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ের পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সন্তানরা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

খোকা মিয়া আর দছিমুদ্দিনের মতো জেলার শত শত বয়স্ক শ্রমিকের জীবনের গল্প প্রায় একই। যে বয়সে বিশ্রাম আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে হাসিখুশি দিন পার করার কথা, সেখানে জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ব্যস্ত কাটছে তাদের দিন।

অটোচালক  বলেন, বয়স্ক ভাতা এবং অটো চালিয়ে যা আয় করি তা দিয়ে চলে সংসার। বৃদ্ধ দেখে আগের মতো আর যাত্রী আমার অটোতে ওঠে না। এরপরও দিনে যা আয় হয় তা দিয়ে দিন চলে যায়।

রিকশাচালক দছিমুদ্দিন বলেন, প্রায় ৬০-৭০বছর ধরে এই রিকশা চালাই। বুড়া মানুষের রিকশায় আর কেউ চড়তে চায় না। আগে আয় ভালো থাকলেও এখন দিনে এক থেকে দেড়শ টাকা হয়। দুই বুড়া-বুড়ির সংসার চলে যায়। সন্তানরা বিয়ে করে জুদা (আলাদা) হয়া গেছে। মেম্বার-চেয়ারম্যান সরকারি কোনো সহযোগিতা দেয় না।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

কুড়িগ্রাম কলেজ মোড়ের শ্রমিক ইয়াসিন আলী (৫৫)। তিনি বলেন, দিনে পাই ৩০০-৪০০ টাকা। এ দিয়ে বাজারের টাকাই হয় না। বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম তাতে সারা মাসে একদিন গোস্ত, মাছ খাওয়া সম্ভব হয় না।

গোড়াই আনন্দ বাজারের বাসিন্দা সুবারু রবি দাসের স্ত্রী আমরতি বলেন, তিন মেয়ে, এক ছেলে। বিয়ে করে সংসার আলাদা করেছে। প্রায় ৭০ বছর বয়স। বয়স্ক ভাতার জন্য গেছি ৪/৫ হাজার টাকা চাইছে। টাকা দিবার পাই না (পারি না), ভাতাও আর হয় না। এই বাড়ি ওই বাড়ি কাজ করে কোনো মতে দিন চলে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুরই দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা। এই উপজেলার প্রায় ৭৯ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। জেলার সবচেয়ে কম দরিদ্র ফুলবাড়ি উপজেলায়ও ৬৯ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র জীবনযাপন করে। জেলায় কোনো শিল্প কারখানা না থাকায় প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

কুড়িগ্রামের এনজিও সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ লাল বলেন, জেলায় বয়স্ক শ্রমিকের জরিপ না থাকলেও এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধ ভেঙে যাচ্ছে, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার কারণে পিতা মাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে মেয়েসহ তার সন্তানের দায়িত্ব পড়ছে বৃদ্ধ পিতা-মাতার উপর। ফলে বয়সকালেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বের হতে হচ্ছে তাদের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে এই বয়স্ক মানুষদের খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করতে সরকার, জাতিসংঘ এবং দাতা সংস্থার সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিৎ।

 

 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য দূরীকরণে কর্মসংস্থানের জন্য অর্থনৈতিক জোন চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। অর্থনৈতিক জোন চালু হলে দারিদ্র্য অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন:

Exit mobile version